কানাডায় গাঁজা যখন বৈধ
কানাডায় গাঁজার টান। কানাডায় গাঁজা যখন বৈধ তখন একদিনেই গাঁজার জোগানে ঘাটতি, মজুদ শেষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও গাঁজা পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
আর যারা পাচ্ছেন তারা হাসতে হাসতে ফিরছেন।
বাকিদের মুখ ভার, তাকানো যাচ্ছে না তাদের মুখের দিকে। সিনেটে ৫২-২৯ ভোটে ‘দ্য ক্যান্নাবিস অ্যাক্ট’ নামের ঐ আইনটি পাস হয়। এই
আইনের মাধ্যমে কীভাবে গাঁজা উৎপাদন হবে, সরবরাহ হবে এমনকি বিক্রি হবে তা
নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দেশটিতে বুধবার থেকে গাঁজা বৈধভাবে
দোকানে বিক্রি শুরু হওয়ার প্রথমদিনেই এ সংকটে পড়েন ব্যাবসায়ীরা।
কানাডায় দোকানে গাঁজা বিক্রি শুরু |
ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, প্রতি
আউন্স বিক্রি হচ্ছে ৮০৭ ডলারে। তারপরও ঠেলে ফেলা যাচ্ছে না ভিড়। দোকান
খোলার আগে থেকেই লাইন ধরছেন ক্রেতারা। তাদের চাহিদা এত যে, খুচরা বিক্রেতা
প্রতিষ্ঠানগুলোতে গাঁজার স্টক প্রথমদিনেই ফুরিয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও এ সংকট
অব্যাহত ছিল।
অনেক ক্রেতা বুধবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার
পর দেখেন দোকানের স্টক ফুরিয়ে গেছে। পরে গাঁজা বিক্রেতাদের ঘোষণা অনুযায়ী,
তারা আবার বৃহস্পতিবার লাইনে দাঁড়ান। উঠতি বয়সী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধ-
লাইনে সব প্রজন্মই আছে।
মন্ট্রিলার ৩০ বছর বয়সী গ্রাহক
আলেক্সজান্ডার বলেন, আমি টানা ৭ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে গাঁজার দেখা
পেয়েছি। এতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা সত্যিই বিরক্তিকর। কিন্তু আমাদের কাছে তা মনে
হয়নি। লাইনে আমরা খুব মজা করেছি।
৪১ বছর বয়সী গেনিভিভ ডেসপার তার শুকনো মুখটা বাড়িয়ে বলেন, প্রায় একবেলা দাঁড়িয়ে থেকেও আমি পেলাম না। কিন্তু এতে আমার কোনো দুঃখ নেই।
কারণ আমি আসলে এটা খাই না। এতদিনের
নিষিদ্ধ একটা জিনিসের প্রথম এমন খোলামেলা বিক্রি! সেটা উপভোগ করতেই আমি
লাইন ধরেছিলাম। নতুন আইনটি চালু হওয়ার পর অনলাইনে অর্ডার দিয়েও সময়মতো
গাঁজা পাননি অনেক ক্রেতা। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিশাল পরিমাণে অর্ডার থাকায় এ
সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু বাজারে গাঁজার চাহিদার পরিমাণও
লক্ষণীয়। কানাডার সবচেয়ে ছোট প্রদেশগুলোর একটি নোভা স্কোশিয়াতেই প্রথমদিনে ৫
লাখ ছয় হাজার ডলার বা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা মূল্যের গাঁজা বিক্রি হয়েছে।
সবচেয়ে জনবহুল প্রদেশ অন্তেরিওর চিত্র আরও ভয়াবহ।
প্রথমদিন শুধু অনলাইনেই অর্ডার পড়েছে
সাড়ে সাত লাখ ডলার মূল্যের গাঁজার। এ মাত্র ৩৮ হাজার ভোক্তার চাহিদা। পাশের
কিউবি প্রদেশেও অপেক্ষায় আছেন ৪২ হাজার গ্রাহক।
নিউফাউন্ডল্যান্ড, সাস্কাচুয়ান প্রদেশ
এবং নুনাভুত এলাকায়ও গাঁজার চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের সংকট দেখা দিয়েছে।
২০১৫ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় গাঁজা বৈধ করার প্রতিশ্রুতি দেন
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্র–ডো। তার মতে, আগে এটি নিষিদ্ধ করে যে আইন ছিল
তা ফলপ্রসূ ছিল না। সেটি বদলে তিনি নতুন আইন করার কথা বলেন, যাতে
অপ্রাপ্তবয়স্কদের হাতে এটি না যায় এবং এর থেকে অপরাধী চক্র লাভবান না হয়।
আইন পাস হলেও এর কার্যকারিতা আগামী
সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। পাস হওয়ার পর আইনটিকে রাজার অনুমোদনের জন্য
পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে সিনেট একটি তারিখ নির্ধারণ করবেন যে তারিখ থেকে
আইনটি কার্যকর হবে।
সরকার জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক সরকার এবং পুলিশদের নতুন এই আইন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিতে আট থেকে ১২ সপ্তাহ লেগে যেতে পারে।
এদিকে পৃথিবীতে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে কানাডায় গাঁজা উৎপাদন, সরবরাহ এবং সেবন বৈধতা পেলো। এর আগে উরুগুয়েতে গাঁজা বিক্রি ও সেবন
বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। নেদারল্যান্ডস ও পর্তুগালে এটিকে অপরাধমূলক মাদক
হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। আমেরিকার কয়েকটি প্রদেশে গাঁজার ব্যবহার বৈধ।
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকাও এটিকে বৈধ ঘোষণা করার পদক্ষেপ নিয়েছে।
সূত্রঃ বিবিসি
সূত্রঃ বিবিসি
No comments