Ad

কানাডার ওপর সৌদি এত ক্ষ্যাপা কেন?

হঠাৎ করেই কিছু দিন আগে থেকে সৌদি আরব ও কানাডার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সৌদি আরব তাদের দেশ থেকে কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ইতিমধ্যেই বহিষ্কার করে নিয়েছে এবং কানাডায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠিয়েছিল। একই সঙ্গে সৌদি আরব বলছে, কানাডার সঙ্গে তাদের সব ধরনের বিনিয়োগ ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক আপাতত স্থগিত করার কথা।

কানাডার ওপর সৌদি এত ক্ষ্যাপা কেন? এ বেপারে সৌদি আরবের দাবি, কানাডা তাদের ‘অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ’ করেছে, তাই তারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কানাডার বিরুদ্ধে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকটি টুইট করেছে।

সৌদি আরব সম্প্রতি বেশ কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করেছে, যাদের মধ্যে ছিলেন প্রখ্যাত সৌদি-আমেরিকান নারী মানবাধিকার কর্মী সামার বাদাউয়ি। তিনি সৌদি আরবে পুরুষ অভিভাকত্বের শেষ দেখতে চেয়েছিলেন। সৌদি মানবাধিকার কর্মীদের গ্রেফতারে নিন্দা জানিয়ে কানাডা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ করে’  একটি বিবৃতি দেয়। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের দেওয়া ওই বিবৃতিতে আটক মানবাধিকার কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে সৌদি সরকারের প্রতি দাবি জানায় কানাডা। কানাডার এ বিবৃতিকে তাদের দেশের ‘অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ’ অভিহিত করে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায় সৌদি আরব।

তবে কানাডার এ উদ্বেগ ও আহ্বানের পেছনে অবশ্য একটি গল্প আছে। সামার বাদাবি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর ভাই একজন সুপরিচিত ব্লগার রাইফ বাদাবির পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। ইসলাম ধর্ম ত্যাগ এবং ইলেকট্রনিক চ্যানেলের মাধ্যমে ইসলামকে অবমাননার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ ২০১৪ সালে রাইফকে ১০ বছরের জেল এবং এক হাজার চাবুক মারার নির্দেশ দেয়। ২০১২ সালে রাইফ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী এনসাফ হায়দার তাঁর তিন সন্তানকে নিয়ে কানাডায় পালিয়ে যান। গত ১ জুলাই তাঁদের কানাডার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে এনসাফ তাঁর স্বামীর মুক্তির জন্য প্রচারণা চালিয়ে আসছেন, যা সৌদি আরবকে বিরক্ত করেছে। কানাডার প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার এটাও একটা কারণ হতে পারে।

সৌদি আরবের ক্ষুব্ধ হওয়ার আরেকটি কারণ হতে পারে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপারের আমলে করা ১৫ বিলিয়ন ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির ব্যাপারে কানাডীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রশ্ন তোলা। সৌদি শাসকদের নির্যাতনের প্রবণতা এবং দেশটির মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে সেখানে অস্ত্র রপ্তানির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংবাদমাধ্যমগুলো। এই চুক্তিতে সৌদি আরবের কাছে হালকা অস্ত্র বিক্রির কথা বলা হয়েছে, যা সৌদি নেতৃত্বাধীন ইয়েমেনের যুদ্ধে বা খোদ সৌদি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হতে পারে। এ ব্যাপারে উদ্বেগ থাকা সত্ত্বেও কানাডার বর্তমান সরকার অস্ত্র চুক্তি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু দেশটির গণমাধ্যমগুলো এর বিরোধিতা করছে।






সৌদি আরব-কানাডা সম্পর্ক
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপ সহ্য করবে না। কানাডার অবস্থানকে তাদের রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণ হিসেবে চিহ্নিত করে তারা নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নিচ্ছে—
  • দুই দেশের মধ্যে নতুন সব ধরনের বিনিয়োগ লেনদেন স্থগিত।
  • সৌদি আরবে নিযুক্ত কানাডিয়ান রাষ্ট্রদূতকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সৌদি ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
  • কানাডায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূতকে দেশে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
  • টরন্টোর সঙ্গে নিজেদের বিমান যোগাযোগও স্থগিত করেছে।
  • পরবর্তীতে আরও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে।
সৌদি আরবের এসব পদক্ষেপের বিষয়ে কানাডা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
সৌদি আরবে গত বছর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি বেশ কিছু সংস্কারমূলক কাজে হাত দিয়েছিলেন তার মধ্যে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি অন্যতম এ ছাড়াও নারী ভক্তদের মাঠে বসে খেলা দেখা এবং সিনেমার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার । এসব কারণে তিনি বেশ প্রশংসিত হচ্ছিলেন। কিন্তু মানবাধিকার কর্মীদের সাম্প্রতিক এ অাটক তার অর্জনে কালিমালেপন করেছে বলে অনেককেই মন্তব্য করছেন। এমনকি যেসব মানবাধিকার কর্মীর আটক হয়েছেন, তারাও ক্রাউন প্রিন্সের নানা সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছিলেন।

এক গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের সঙ্গে অচলাবস্থা কাটাতে, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ব্রিটেনের সহযোগিতা চেয়েছে কানাডা। দেশগুলোকে কানাডা আহ্বান জানিয়ে বলেছে, সংকটে মধ্যস্থতা করার জন্য।

সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে বিষয়টি নিয়ে দেশের পররাষ্ট্রবিষয়ক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেছে জাস্টিন ট্রুডোর সরকার। তাদের পরামর্শেই হয়তো সৌদি মিত্রদের দিকে হাত বাড়িয়েছে দেশটি। কিন্তু সৌদি রয়েছে অনড় অবস্থানে। শুধু তা–ই নয়, কানাডার বিরুদ্ধে আরও কঠোর হতে যাচ্ছে দেশটি। সৌদি আগেই জানিয়ে দিয়েছে, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের নাগ গলানো সহ্য করবে না তারা। সর্বশেষ চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কানাডার প্রতি সৌদি আরবের কূটনৈতিক কঠোরতা আরও জোরদার হলো।

সূত্রঃ বিবিসি   এবং অনলাইন

No comments

Powered by Blogger.